Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

সেবার তালিকা

উপবৃত্তি প্রদানঃ

প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান দেশব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহের দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের এক ইতিবাচক এবং যুগামকারী কর্মসূচি। ‘‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (২য় পর্যায়)’’ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সমত্মানদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বতন্ত্রএবতেদায়ী মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরের ছাত্র-ছাত্রীর ভর্তির হার বৃদ্ধি, উপস্থিতি বৃদ্ধি, ঝরে পড়ার হার রোধকরণ, শিক্ষা কর্মসূচি সমাপ্তির হার বৃদ্ধিকরণ, শিশুশ্রম রোধ ও দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ এবং প্রাথমিক শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা ব্যতিত সকল ইউনিয়নের প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বতন্ত্রএবতেদায়ী মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীর মধ্য হতে অনুমোদিত ও সংশোধিত প্রকল্প দলিলে প্রদত্ত সংস্থান মোতাবেক দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হবে। উপবৃত্তি প্রকল্প সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ের জন্য সকল ব্যাংক, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বিভাগীয় উপ-পরিচালক (প্রাথমিক শিক্ষা), জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার,সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপবৃত্তি মনিটরিং অফিসার, প্রধান শিক্ষক এবং স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে নিম্নোক্ত নির্দেশাবলী যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
 

১। প্রকল্প এলাকা ও প্রকল্পভুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহঃ
১.১ প্রকল্প এলাকা বলতে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা ব্যতিত দেশের সমগ্র এলাকা বুঝাবে।
১.২ প্রকল্পভুক্তির জন্য যোগ্য প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে নিম্নোক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বুঝাবেঃ
(ক) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়;
(খ) রেজিষ্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়;
(গ) কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়;
(ঘ) অস্থায়ী রেজিষ্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়;
(ঙ) সরকারী অনুদানে এন,জি,ও কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রাথমিক বিদ্যালয়;
(চ) সরকার কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা এবং
(ছ) মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক সত্মর।
 
২। দরিদ্র পরিবারঃ
এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দরিদ্র পিতামাতা/অভিভাবকগণ যাতে তাদের সমানদের জীবিকা অর্জনে নিয়োজিত না করে বিদ্যালয়ে প্রেরণ করেন তা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বতন্ত্রএবতেদায়ী মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরের অধ্যয়নরত দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
 
 
দরিদ্র পরিবার বলতে নিম্নোক্ত শ্রেণীভুক্ত পরিবারকে বুঝাবে -
(ক) দুঃস্থ বিধবা মহিলার পরিবার;
(খ) দিনমজুর;
(গ) অস্বচ্ছল চাকরীজীবি, অস্বচ্ছল পেশাজীবি, যেমন- জেলে, কুমার, কামার, তাঁতী, মুচী ইত্যাদি;
(ঘ) অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীর পরিবার;
(ঙ) অস্বচ্ছল উপজাতি ছাত্র-ছাত্রীর পরিবার।
 
৩। দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রী বাছাইঃ
৩.১ প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট কমিটির সহায়তায় ২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত মানদন্ড অনুযায়ী সংশিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্বীকৃতপ্রাপ্ত স্বতন্ত্রএবতেদায়ী মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক সরে ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য হতে অনুমোদিত ও সংশোধিত দলিলে প্রদত্ত সংস্থান মোতাবেক দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীকে নির্বাচন করে একটি তালিকা প্রণয়ন করবেন।
৩.২ প্রস্তুকৃত তালিকা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার যাচাই করবেন এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার তা অনুমোদন করবেন।
৩.৩ অনুমোদিত তালিকা নির্ধারিত ‘ছকে’ প্রস্তুতকৃত বাঁধাই করা ০২ (দুই)টি রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করে প্রধান শিক্ষক উহার এক প্রস্থ সংল্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করবেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার উক্ত তালিকা সংরক্ষণ করবেন এবং উক্ত বিদ্যালয়ে ০১ (এক)টি অনুমোদিত সুবিধাভোগীর তালিকা সংরক্ষিত থাকবে। ৩.৪ প্রত্যেক বছর ১ম শ্রেণীর দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রী ও পরিবার (এক সমান/একাধিক সমান বিশিষ্ট) চিহ্নিত করতে হবে। ৩.৫ উপবৃত্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ৪.৩ অনুচ্ছেদ মোতাবেক নম্বর না পেলে, বিদ্যালয় ত্যাগ করলে, একনাগাড়ে তিনমাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলে অথবা কোন শর্ত ভঙ্গের কারণে যদি কোন সুবিধাভোগী ছাত্র-ছাত্রীর কার্ড বাতিল হয় সেক্ষেত্রে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ পূর্বক উপবৃত্তি প্রাপ্তির যোগ্যতা সম্পন্ন অপর কোন ছাত্র-ছাত্রীকে তদস্থলে উপবৃত্তির সুবিধাভোগী হিসাবে নির্বাচন করতে হবে এবং তার অনুকূলে কার্ড ইস্যু করতে হবে।
 
৪। উপবৃত্তি প্রাপ্তির শর্তাবলীঃ
৪.১ কেবলমাত্র ২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত পরিবারের সমানেরা উপবৃত্তি প্রাপ্তির জন্য বিবেচিত হবে।
৪.২ তালিকাভুক্ত দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীকে মাসে যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত কমপক্ষে ৮৫% পাঠদিবসে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে। অন্যথায় ঐ মাসে ঐসব ছাত্র-ছাত্রী উপবৃত্তি পাবে না (যুক্তি সংগত কারণ প্রধান শিক্ষক নির্ধারণ করবেন)। তবে পাহাড়ী এলাকার শিক্ষার্থী এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৭৫% এবং আকস্মিক কোন দুর্যোগের কারণে দেশের কোন এলাকার শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা অসম্ভব হয়ে পড়লে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম হলেও উপবৃত্তি প্রদান করা যাবে।
৪.৩ সকল শ্রেণীর (১ম শ্রেণী ব্যতীত) ছাত্র-ছাত্রীকে বার্ষিক পরীক্ষায় ৩৩% নম্বর পেতে হবে। বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে কোন ছাত্র/ছাত্রী উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে না।
৪.৪ তালিকাভুক্ত প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে শ্রেণী অনুযায়ী নির্ধারিত পরীক্ষাসমূহ সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। কোন বিদ্যালয় তা করতে ব্যর্থ হলে স্কুল কন্টিজেন্সী বন্ধ, উপবৃত্তি স্থগিতসহ অন্যান্য বিধিগত  ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৪.৫ সুবিধাভোগী যে সব ছাত্র-ছাত্রী যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না তাদের পরবর্তী পরীক্ষা পর্যন্ত উপবৃত্তি স্থগিত রাখা হবে।
৪.৬ কোন অনুকূল আবহাওয়ার দিনে পরিদর্শনকালে মোট ছাত্র-ছাত্রীর ৬০% এর কম উপস্থিতি দেখা গেলে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার উপস্থিতি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। পরবর্তী মাসে উপস্থিতি বৃদ্ধি না পেলে বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি স্থগিতকরণসহ সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৪.৭ সরকার কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বতন্ত্রএবতেদায়ী মাদ্রাসাসমূহে কমপক্ষে ১০০ (একশত) জন ছাত্র/ছাত্রী থাকতে হবে এবং উপবৃত্তি প্রাপ্তির জন্য সকল শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।
৪.৮ যৌথ কার্ডধারী দুইজন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে যদি একজন ছাত্র/ছাত্রী উপবৃত্তি প্রাপ্তির শর্তাবলী ভংগ করে তবে অপরজন একক কার্ডধারী হিসাবে সুবিধা পাবে। যৌথ কার্ড একক কার্ড হিসেবে এবং পরবর্তীতে একক কার্ড যৌথকার্ড হিসেবে ব্যবহারের সময়  মন্তব্য কলামে লিখতে হবে।
বিনামূল্যে বই বিতরণঃ জানুয়ারিতে বই উৎসবে মেতেছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী। এদিন সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ বর্তমান সরকারের একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। এ বছর প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বইয়ের পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে অনুশীলন খাতা। পাঠ্যবই নিয়ে ইতিপূর্বে প্রতি বছরই যে অশুভ সংকট দানা বেঁধে উঠত বিনামূল্যে বই বিতরণের মাধ্যমে তার ইতি ঘটানো সম্ভব হয়েছে। পকেটের টাকা খরচ করেও আগে সময়মতো পাঠ্যবই কেনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াত। অসৎ বই ব্যবসায়ীরা মুনাফা অর্জনের জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানির মুখে ঠেলে দিত। পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে নোটবই কিনতেও তাদের বাধ্য করা হতো। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ সেই অবস্থার অবসান ঘটিয়েছে। প্রাথমিকের পাশাপাশি মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। সরকার শিক্ষাকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। পরিণতিতে শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দারিদ্র্যমুক্তিও ঘটছে। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণসহ শিক্ষা খাতে বাজেটের এক উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ যে জাতির জন্য সত্যিকার অর্থেই লাভজনক তা বাস্তবতার নিরিখেই প্রমাণিত হয়েছে। সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সাড়ে চার কোটি ছাত্রছাত্রীকে এ বছর বিনামূল্যে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ কপি বই বিতরণ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দিনেই যাতে বই হাতে পায় তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি স্কুলে বই পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনামূল্যে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই বিতরণ ও নারীদের অবৈতনিক শিক্ষার যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে তা বিশ্ব সমাজেরও প্রশংসা অর্জন করেছে। তবে শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় সরকার কতটা সফল তা সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়। শিক্ষক নিয়োগে নিয়োগ বাণিজ্যের অবসান এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার পরিবেশ নিষ্কণ্টক করতে সরকারকে যত্নবান হতে হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে নানামুখী কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নিয়েও শিক্ষা ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছা দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা আশা করব নিজেদের সুনামের স্বার্থেই শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হবে।